রবিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২১

তোমরা নামাযের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষতঃ মধ্যবর্তী নামাযের প্রতি এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে তোমরা বিনীতভাবে দাঁড়াও।”(সূরাহ বাকারা, আয়াত নং ২৩৮)

চেয়ারে বসে নামায পড়া জায়েয আছে কি? এক নজরে দেখেনেই কুরআন হাদিস কি ভলে

বর্তমানে প্রায় মসজিদেই অনেক মুসল্লীকে চেয়ারে বসে নামায আদায় করতে দেখা যায়। কিন্তু শরীয়তের বিধান অনুযায়ী চেয়ারে বসে নামায আদায় করাটা সঠিক হচ্ছে কিনা সেটা অনেকেই জানেন না।

জনসার্থে হাদিসটা কপি কিনবা সেয়ার।প্লিজ
সংগ্রহঃ www.koborki.blogspot.com

এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, বর্তমানে যারা চেয়ারে নামায পড়ছেন, তাদের অনেকেরই উজর-সমস্যা এতই সাধারণ যে, এ ধরনের সমস্যার কারণে চেয়ারে বসে নামায আদায় করাটা বৈধ হয় না। ফলে তাদের চেয়ারে বসে পড়া নামায আদায় হচ্ছে না। একটু কষ্ট করে চেয়ার ছাড়াই তারা নামায আদায় করতে পারেন। কিন্তু তারা সেটা না করে একটু আরামের জন্য চেয়ারে বসেই নামায আদায় করে যাচ্ছেন। এতে নামায আদায় করা সত্ত্বেও নামায শুদ্ধ না হওয়ার কারণে তারা গুনাহগার হচ্ছেন।

এজন্য নিজের উজরের অবস্হা প্রকাশ করে এ সংক্রান্ত মাসআলা বিজ্ঞ মুফতীগণের নিকট থেকে জেনে নেয়া একান্ত জরুরী। যাতে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত নামায সহীহ-শুদ্ধ হয়। বক্ষমান নিবন্ধে সংক্ষেপে বিষয়টি আলোচনা করার প্রয়াস পাব।

কিয়াম তথা দাঁড়ানো নামাযের একটি ফরজ রুকন। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন-

حَافِظُوا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلَاةِ الْوُسْطَىٰ وَقُومُوا لِلَّهِ قَانِتِين

“তোমরা নামাযের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষতঃ মধ্যবর্তী নামাযের প্রতি এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে তোমরা বিনীতভাবে দাঁড়াও।”

(সূরাহ বাকারা, আয়াত নং ২৩৮)

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসসিরগণ বলেন, এখানে নামাযে দাঁড়ানোর কথা বলা হয়েছে। (বাদায়িউস সানায়ি‘, ১ম খণ্ড, ২৮৭ পৃষ্ঠা)

তাই দাঁড়াতে সক্ষম হলে, ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নাতে মুআক্কাদাহ্‌ নামায দাঁড়িয়েই আদায় করতে হবে। এ সকল নামায বসে আদায় করলে, সহীহ হবে না।

(ফাতাওয়া শামী, ২য় খণ্ড, ৫৬৫ পৃষ্ঠা)

সংগ্রহঃ মৃত্যুর দুয়ারে দাড়িয়েও ভলবো তোমাকে ভালবাসি!এবং সংস্কারকবৃন্দ গ্রুপ।

জনসার্থেঃ হাদিসটা কপি কিনবা সেয়ার প্লিজ।

অবশ্য নফল নামায দাঁড়াতে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও বসে আদায় করা জায়িয আছে। তবে তাতে দাঁড়ানোর তুলনায় অর্ধেক সাওয়াব হবে।

(ফাতাওয়া শামী, ২য় খণ্ড, ৫৬৫ পৃষ্ঠা)

চুইটারঃ নিষ্ঠুর প্রেমঃ এবং সংস্কারকবৃন্দ পেইজ। জনসার্থেঃ হাদিসটা কপি কিনবা সেয়ার প্লিজ।

বিষয়টি একটি হাদীসে সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। হাদীসটি নিম্নরূপ–

عن عِمرانَ بنِ حُصَينٍ رضيَ اللهُ عنه، قال: سألتُ النبيَّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم عن صلاةِ الرَّجلِ وهو قاعدٌ، فقال: مَنْ صَلَّى قَائِمًا فَهُوَ أَفْضَلُ ، وَمَنْ صَلَّى قَاعِدًا فَلَهُ نِصْفُ أَجْرِ الْقَائِمِ

হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)কে বসে নামায আদায় করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, “কেউ যদি দাঁড়িয়ে নামায আদায় করে, তাহলে তা তার জন্য উত্তম। আর বসে নামায আদায় করলে সে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করার অর্ধেক সাওয়াব পাবে।”

(সহীহ বুখারী, ১ম খণ্ড, ১৫০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ১০৬৪/ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৩৫/ জামি‘ তিরমিযী, ১ম খণ্ড, ৮৫ পৃষ্ঠা)

এ হাদীসটি নফল নামাযের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কারণ, দাঁড়াতে সক্ষম হলে, ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নাতের মুআক্কাদাহ নামায বসে আদায় করা জায়িয নয়। তাই ইমাম তিরমিযী (রহ.) জামি‘ তিরমিযীতে হাদীসটি উল্লেখ করার পর লিখেছেন, “কতক আলেম এই হাদীসটির মর্ম সম্পর্কে বলেছেন, এটি নফলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তবে হযরত সুফিয়ান সাওরী (রহ.) বলেন, কেউ কোনো অসুস্হতা বা উজরের কারণে বসে নফল নামায আদায় করলে, সে দাঁড়িয়ে নামায আদায়ের সমান সাওয়াবই পাবে। এ সম্পর্কে হাদীসের বর্ণনা রয়েছে।”

(দ্রষ্টব্য : জামি‘ তিরমিযী, ১ম খণ্ড, ৮৫ পৃষ্ঠা)

অবশ্য দাঁড়াতে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও নফল নামায বসে পড়লে, জমিনে বসেই পড়তে হবে। চেয়ারে বসে পড়লে নামায সহীহ হবে না। জমিনে বসে হাঁটু বরাবর মাথা ঝুঁকিয়ে রুকু করতে হবে। সিজদা করতে সক্ষম হলে, জমিনেই সিজদা করতে হবে।

(ফাতাওয়া তাতারখানিয়া, ১ম খণ্ড, ১৭১ পৃষ্ঠা)

যিনি দাঁড়াতে সক্ষম, কিন্তু নিয়মমত রুকু-সিজদা করতে অক্ষম, রুকু-সিজদা করতে মারাত্মক কষ্ট হয় বা রোগ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে অথবা রোগ সারতে বিলম্ব হবে, এ ধরনের লোক দাঁড়িয়ে ইশারায় রুকু-সিজদা করে নামায আদায় করবেন। জমিনে বা চেয়ারে বসে নামায আদায় করলে নামায সহীহ হবে না। কারণ, নামাযে কিয়াম বা দাঁড়ানো একটি ফরজ। অপারগতা ছাড়া তা বাদ দিলে নামায সহীহ হবে না।

(বাদায়ি‘উস সানায়ি‘, ১ম খণ্ড, ১০৭ পৃষ্ঠা/ মাজমা‘উল আনহুর, ১ম খণ্ড, ২২৯ পৃষ্ঠা/ তাবইনুল হাকায়িক, ১ম খণ্ড, ৪৯২ পৃষ্ঠা)

সংগ্রহঃ কেন তুমি এতোটা নিষ্ঠুর হলে? এবং সংস্কারকবৃন্দ পেইজ।

জনসার্থেঃ হাদিসটা কপি কিনবা সেয়ার প্লিজ।

কেউ যদি কোনো কিছুর উপর ভর করে বা হেলান দিয়ে কিংবা টেক লাগিয়ে দাঁড়াতে পারেন, সরাসরি দাঁড়াতে পারেন না, তাহলে তিনি কিছুর উপর ভর করে বা টেক লাগিয়ে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করবেন। জমিনে বা চেয়ারে বসে ফরজ ওয়াজিব ও সুন্নাতে মুআক্কাদাহ নামায আদায় করলে সহীহ হবে না।

(ফাতহুল কাদীর, ২খণ্ড, ৩৩ পৃষ্ঠা/ ফাতাওয়া শামী, ২য় খণ্ড, ৫৬৭ পৃষ্ঠা)



জনসার্থেঃ হাদিসটা কপি কিনবা সেয়ার প্লিজ।

যিনি কিছুক্ষণ দাঁড়াতে পারেন, বেশী সময় দাঁড়াতে পারেন না এবং জমিনে বসতে সক্ষম, তিনি দাঁড়িয়ে নামায শুরু করবেন। যতক্ষণ সম্ভব দাঁড়িয়ে নামায আদায় করবেন। যখন কষ্ট হবে, জমিনে বসে বাকি নামায আদায় করবেন। রুকু-সিজদা নিয়মমতো করবেন। এমতাবস্হায় চেয়ারে বসে নামায আদায় করলে নামায সহীহ হবে না। যেমন, একজন মানুষ দীর্ঘ সময় দাঁড়াতে পারেন না, ফজরের নামাযে দীর্ঘ কিরাআত পড়া হয়, তিনি যদি জামা‘আতে ফজরের নামায আদায় করেন, তাহলে দাঁড়িয়ে শুরু করবেন। যতক্ষণ সম্ভব দাঁড়াবেন। যখন কষ্ট হবে, জমিনে বসে পড়বেন। তিনি চেয়ারে বসে নামায আদায় করতে পারবেন না।

(ফাতহুল কাদীর, ২য় খণ্ড, ৩৩ পৃষ্ঠা/ ফাতাওয়া শামী, ২য় খণ্ড, ৫৬৭পৃষ্ঠা)

যারা দাঁড়াতে এবং রুকু-সিজদা করতে অক্ষম, কিন্তু জমিনে যেকোনোভাবে বসতে সক্ষম, তারা তাদের পক্ষে যেভাবে সম্ভব সেভাবে জমিনে বসেই নামায আদায় করবেন। এ অবস্হায় চেয়ারে বসে আদায় করলে নামায সহীহ হবে না। জমিনে বসে তারা ইশারায় রুকু-সিজদা করবেন। হাঁটু বরাবর মাথা ঝুঁকিয়ে ইশারায় রুকু এবং আরেকটু বেশী ঝুঁকিয়ে সিজদা করতে হবে।

(বাদায়ি‘উস সানায়ি‘, ১ম খণ্ড, ২৮৪ পৃষ্ঠা)

এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-

الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللَّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَىٰ جُنُوبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُونَ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هَٰذَا بَاطِلًا سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

যারা (বুদ্ধিমানরা) দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে আল্লাহর স্মরণ করে, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্বন্ধে চিন্তা করে এবং বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি তা অনর্থক সৃষ্টি করেননি। আপনি পবিত্র। আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন।”

(সূরাহ আলে ইমরান, আয়াত নং ১৯১)

আল্লামা কুরতুবী (রহ.) বলেন, হযরত হাসান বসরীসহ আরো কয়েকজন মুফাসসির বলেছেন, “আয়াতটি নামায সম্পর্কে। অর্থাৎ (বুদ্ধিমান তারা) যারা নামায নষ্ট করে না। উজর হলে বসে বা শুয়ে হলেও নামায আদায় করে। সুতরাং আয়াত থেকে জানা গেল, নামায দাঁড়িয়ে আদায় করতে হবে। দাঁড়াতে সক্ষম না হলে বসে এবং তাও সম্ভব না হলে শুয়ে নামায আদায় করতে হবে।”

(তাফসীরে কুরতুবী, ৪র্থ খণ্ড, ১৯৮ পৃষ্ঠা)

মাবসূতে সারাখসিতে রয়েছে, অসুস্হ ব্যক্তির নামাযের ব্যাপারে মূলনীতি হচ্ছে এ আয়াত-“যারা দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে আল্লাহর স্মরণ করে।” (সূরাহ আলে ইমরান, আয়াত নং ১৯১)

এ আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে ইমাম যাহহাক (রহ.) বলেন, “আয়াতটি হচ্ছে অসুস্হ ব্যক্তির সামর্থ অনুযায়ী নামায আদায়ের বিবরণ।”

(মাবসূতে সারাখসি, ১ খণ্ড, ২১২ পৃষ্ঠা)

একটি হাদীসে বিষয়টির সুস্পষ্ট নির্দেশনা পাওয়া যায়। হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)কে অসুস্হ ব্যক্তির নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন,“দাঁড়িয়ে নামায আদায় করবে। তা সম্ভব না হলে বসে আদায় করবে। তাও সম্ভব না হলে শুয়ে নামায আদায় করবে।”

(সহীহ বুখারী, ১ম খণ্ড, ১৫০ পৃষ্ঠা/ জামি‘ তিরমিযী, ১ম খণ্ড, ৮৫ পৃষ্ঠা)

পোষ্ট বায়ঃ #আধার_কালো_রাতের_চাঁদঃ এবং সংস্কারকবৃন্দ গ্রুপ।

জনসার্থেঃ হাদিসটা কপি কিনবা সেয়ার প্লিজ।

এ হাদীস দ্বারা সুস্পষ্টভাবে বুঝা গেলো, দাঁড়ানো সম্ভব না হলে, তখনই কেবল বসে নামায আদায় করা যাবে। যতক্ষণ পর্যন্ত দাঁড়ানো সম্ভব, ততক্ষণ জমিনে বা চেয়ারে বসে নামায আদায় করলে সহীহ হবে না। আবার যখন যমিনে বসে নামায আদায় করা সম্ভব, তখন শুয়ে বা চেয়ারে বসে নামায আদায় করলে, তা সহীহ হবে না।

যিনি জমিনে স্বাভাবিকভাবে বসতে পারেন না, তবে অন্য কোনভাবে বসতে পারেন, যেমন, কোনকিছুর সাথে টেক লাগিয়ে বসতে পারেন, তিনি সেভাবেই জমিনে বসে নামায আদায় করবেন। তিনি চেয়ারে বসে আদায় করলে, নামায সহীহ হবে না।

(ফাতাওয়া শামী, ২য় খণ্ড, ৫৬৫ পৃষ্ঠা)

হাঁটুতে সমস্যার কারণে অনেকে হাঁটু ভাঁজ করতে পারেন না। এ ধরনের লোকের পক্ষে যদি পশ্চিম দিকে পা ছড়িয়ে জমিনে বসা সম্ভব হয়, তাহলে তারা সেভাবেই জমিনে বসে নামায আদায় করবেন। এমনি করে যে কোনভাবে জমিনে বসে নামায পড়তে সক্ষম হলে, তার জন্য সেভাবেই জমিনে বসে নামায আদায় করতে হবে। এ অবস্হায় তার জন্য চেয়ারে নামায পড়া জায়িয হবে না।

আর যদি কেউ কোনোভাবেই বসতে না পারেন, তাহলে তিনি চিৎ হয়ে শুয়ে নামায আদায় করবেন। তিনি পশ্চিমদিকে পা ছড়িয়ে দিবেন। ইশারায় রুকু-সিজদা করবেন। যদি সম্ভব হয়, তাহলে পশ্চিম দিকে পা না দিয়ে বরং হাঁটু খাড়া রাখবেন এবং মাথার নীচে বালিশ দিয়ে দিবেন, যাতে অন্তত কিছুটা বসার মতো হয় এবং চেহারা আকাশের দিকে না হয়ে কিবলামুখী হয়।

(ফাতাওয়া শামী, ২য় খণ্ড, ৫৬৯ পৃষ্ঠা)

তবে এই শেষাক্ত ক্ষেত্রে অর্থাৎ যদি কোনভাবেই জমিনে বসা সম্ভব না হয় বা কোনোভাবেই তারা জমিনে বসতে না পারেন, তাহলে তখন শুয়ে নামায পড়ার পরিবর্তে চেয়ারে বসে নামায আদায় করতে পারবেন। তখন চেয়ারে বসে ইশারায় রুকু-সিজদা করে নামায আদায় করবেন। সিজদার জন্য রুকুর তুলনায় অধিক মাথা ঝুঁকাতে হবে।

কিন্তু আমাদের দেশে যে সামান্য উজরেই অনেকে চেয়ারে বসে নামায পড়ছেন, তা সহীহ হচ্ছে না। বিশেষ করে তাদের দ্বারা মসজিদে ব্যাপকহারে চেয়ার ব্যবহারের দ্বারা নানারূপ অসুবিধার সৃষ্টি হচ্ছে। তাই ক্ষেত্রে সকলের সচেতন হওয়া কর্তব্য।


---------------------------ধন্যবান্তে_______________

                          Tushr Islam Rakib

শুক্রবার, ১ জানুয়ারি, ২০২১

আদম সূষ্টির কাহিনি:

আল্লাহ একদা ফেরেশতাদের ডেকে বললেন, আমি পৃথিবীতে ‘খলীফা’ অর্থাৎ প্রতিনিধি সৃষ্টি করতে চাই। বল, এ বিষয়ে তোমাদের বক্তব্য কি? তারা (সম্ভবতঃ ইতিপূর্বে সৃষ্ট জিন জাতির তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকে) বলল, হে আল্লাহ! আপনি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে আবাদ করতে চান, যারা গিয়ে সেখানে ফাসাদ সৃষ্টি করবে ও রক্তপাত ঘটাবে? অথচ আমরা সর্বদা আপনার হুকুম পালনে এবং আপনার গুণগান ও পবিত্রতা বর্ণনায় রত আছি। এখানে ফেরেশতাদের উক্ত বক্তব্য আপত্তির জন্য ছিল না, বরং জানার জন্য ছিল। আল্লাহ বললেন, আমি যা জানি, তোমরা তা জানো না (বাক্বারাহ ২/৩০)। অর্থাৎ আল্লাহ চান এ পৃথিবীতে এমন একটা সৃষ্টির আবাদ করতে, যারা হবে জ্ঞান ও ইচ্ছাশক্তি সম্পন্ন এবং নিজস্ব বিচার-বুদ্ধি ও চিন্তা-গবেষণা সহকারে স্বেচ্ছায়-সজ্ঞানে আল্লাহর বিধান সমূহের আনুগত্য করবে ও তাঁর ইবাদত করবে। ফেরেশতাদের মত কেবল হুকুম তামিলকারী জাতি নয়।

খলীফা অর্থ :

এখানে ‘খলীফা’ বা প্রতিনিধি বলে জিনদের পরবর্তী প্রতিনিধি হিসাবে বনু আদমকে বুঝানো হয়েছে, যারা পৃথিবীতে একে অপরের প্রতিনিধি হবে (ইবনু কাছীর)। অথবা এর দ্বারা আদম ও পরবর্তী ন্যায়নিষ্ঠ শাসকদের বুঝানো হয়েছে, যারা জনগণের মধ্যে আল্লাহর আনুগত্য ও ইনছাফপূর্ণ শাসক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করবে। কেননা ফাসাদ সৃষ্টিকারী ও অন্যায় রক্তপাতকারী ব্যক্তিরা আল্লাহর প্রতিনিধি নয় (ইবনু জারীর)। তবে প্রথম ব্যাখ্যাই অগ্রগণ্য, যা ফেরেশতাদের জবাবে প্রতীয়মান হয় যে, এমন প্রতিনিধি আপনি সৃষ্টি করবেন, যারা পূর্ববর্তী জিন জাতির মত পৃথিবীতে গিয়ে ফাসাদ ও রক্তপাত ঘটাবে। বস্ত্ততঃ ‘জিন জাতির উপর ক্বিয়াস করেই তারা এরূপ কথা বলে থাকতে পারে’ (ইবনু কাছীর)।

অতঃপর আল্লাহ আদমকে সবকিছুর নাম শিক্ষা দিলেন। ‘সবকিছুর নাম’ বলতে পৃথিবীর সূচনা থেকে লয় পর্যন্ত ছোট-বড় সকল সৃষ্টবস্ত্তর ইল্ম ও তা ব্যবহারের যোগ্যতা তাকে দিয়ে দেওয়া হ’ল।[9] যা দিয়ে সৃষ্টবস্ত্ত সমূহকে আদম ও বনু আদম নিজেদের অনুগত করতে পারে এবং তা থেকে ফায়েদা হাছিল করতে পারে। যদিও আল্লাহর অসীম জ্ঞানরাশির সাথে মানবজাতির সম্মিলিত জ্ঞানের তুলনা মহাসাগরের অথৈ জলরাশির বুক থেকে পাখির ছোঁ মারা এক ফোঁটা পানির সমতুল্য মাত্র।[10] বলা চলে যে, আদমকে দেওয়া সেই যোগ্যতা ও জ্ঞান ভান্ডার যুগে যুগে তাঁর জ্ঞানী ও বিজ্ঞানী সন্তানদের মাধ্যমে বিতরিত হচ্ছে ও তার দ্বারা জগত সংসার উপকৃত হচ্ছে। আদমকে সবকিছুর নাম শিক্ষা দেওয়ার পর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য আল্লাহ তাকে ফেরেশতাদের সম্মুখে পেশ করলেন। কুরআনে কেবল ফেরেশতাদের কথা উল্লেখিত হ’লেও সেখানে জিনদের সদস্য ইবলীসও উপস্থিত ছিল (কাহফ ১৮/৫০)। অর্থাৎ আল্লাহ চেয়েছিলেন, জিন ও ফেরেশতা উভয় সম্প্রদায়ের উপরে আদম-এর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হৌক এবং বাস্তবে সেটাই হ’ল। তবে যেহেতু ফেরেশতাগণ জিনদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ও উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন, সেজন্য কেবল তাদের নাম নেওয়া হয়েছে। আর দুনিয়াতে জিনদের ইতিপূর্বেকার উৎপাত ও অনাচার সম্বন্ধে ফেরেশতারা আগে থেকেই অবহিত ছিল, সেকারণ তারা মানুষ সম্বন্ধেও একইরূপ ধারণা পোষণ করেছিল এবং প্রশ্নের জবাবে নেতিবাচক উত্তর দিয়েছিল। উল্লেখ্য যে, ‘আল্লাহ জিন জাতিকে আগেই সৃষ্টি করেন গনগনে আগুন থেকে’ (হিজর ১৫/২৭)। কিন্তু তারা অবাধ্যতার চূড়ান্ত করে।

আদমকে ফেরেশতাদের সম্মুখে পেশ করার পর আল্লাহ ফেরেশতাদেরকে ঐসব বস্ত্তর নাম জিজ্ঞেস করলেন। কিন্তু সঙ্গত কারণেই তারা তা বলতে পারল না। তখন আল্লাহ আদমকে নির্দেশ দিলেন এবং তিনি সবকিছুর নাম বলে দিলেন। ফলে ফেরেশতারা অকপটে তাদের পরাজয় মেনে নিল এবং আল্লাহর মহত্ত্ব ও পবিত্রতা ঘোষণা করে বলল, হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে যতটুকু শিখিয়েছেন, তার বাইরে আমাদের কোন জ্ঞান নেই। নিশ্চয়ই আপনি সর্বজ্ঞ ও দূরদৃষ্টিময়’ (বাক্বারাহ ২/৩২)। অতঃপর আল্লাহ তাদের সবাইকে আদমের সম্মুখে সম্মানের সিজদা করতে বললেন। সবাই সিজদা করল, ইবলীস ব্যতীত। সে অস্বীকার করল ও অহংকারে স্ফীত হয়ে প্রত্যাখ্যান করল। ফলে সে কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হ’ল (বাক্বারাহ ২/৩৪)। ইবলীস ঐ সময় নিজের পক্ষে যুক্তি পেশ করে বলল, ‘আমি ওর চাইতে উত্তম। কেননা আপনি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছেন আর ওকে সৃষ্টি করেছেন মাটি দিয়ে’। আল্লাহ বললেন, তুই বের হয়ে যা। তুই অভিশপ্ত, তোর উপরে আমার অভিশাপ রইল পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত’ (ছোয়াদ ৩৮/৭৬-৭৮; আ‘রাফ ৭/১২)

সিজদার ব্যাখ্যা ও উদ্দেশ্য :

আদমকে সৃষ্টি করার আগেই আল্লাহ ফেরেশতাদেরকে আদমের প্রতি সিজদা করার কথা বলে দিয়েছিলেন (হা-মীম সাজদাহ/ফুছছিলাত ৪১/১১)। তাছাড়া কুরআনের বর্ণনা সমূহ থেকে একথা স্পষ্ট হয় যে, আদমকে সিজদা করার জন্য আল্লাহর নির্দেশ ব্যক্তি আদম হিসাবে ছিল না, বরং ভবিষ্যৎ মানব জাতির প্রতিনিধিত্বকারী হিসাবে তাঁর প্রতি সম্মান জানানোর জন্য জিন ও ফিরিশতাদের সিজদা করতে বলা হয়েছিল। এই সিজদা কখনোই আদমের প্রতি ইবাদত পর্যায়ের ছিল না। বরং তা ছিল মানবজাতির প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন ও তাদেরকে সকল কাজে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দানের প্রতীকী ও সম্মান সূচক সিজদা মাত্র।

ওদিকে কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হ’লেও ইবলীস কিন্তু আল্লাহকে সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা হিসাবে অস্বীকার করেনি। বরং আল্লাহ যখন তাকে ‘অভিসম্পাৎ’ করে জান্নাত থেকে চিরদিনের মত বিতাড়িত করলেন, তখন সে আল্লাহ্কে ‘রব’ হিসাবেই সম্বোধন করে প্রার্থনা করল, قَالَ رَبِّ فَأَنظِرْنِي إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ- ‘হে আমার প্রভু! আমাকে আপনি ক্বিয়ামত পর্যন্ত অবকাশ দিন’ (হিজর ১৫/৩৬, ছোয়াদ ৩৮/৭৯)। আল্লাহ তার প্রার্থনা মঞ্জুর করলেন। অতঃপর সে বলল, ‘হে আমার পালনকর্তা! আপনি যেমন আমাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, আমিও তেমনি তাদের সবাইকে পৃথিবীতে নানারূপ সৌন্দর্যে প্রলুব্ধ করব এবং তাদেরকে পথভ্রষ্ট করে দেব। তবে যারা আপনার একনিষ্ঠ বান্দা, তাদের ব্যতীত’ (হিজর ১৫/৩৪-৪০; ছোয়াদ ৩৮/৭৯-৮৩)। আল্লাহ তাকে বললেন, তুমি নেমে যাও এবং এখান থেকে বেরিয়ে যাও। তুমি নীচুতমদের অন্তর্ভুক্ত। এখানে তোমার অহংকার করার অধিকার নেই’ (আ‘রাফ ৭/১৩)। উল্লেখ্য যে, ইবলীস জান্নাত থেকে বহিষ্কৃত হ’লেও মানুষের রগ-রেশায় ঢুকে ধোঁকা দেওয়ার ও বিভ্রান্ত করার ক্ষমতা আল্লাহ তাকে দিয়েছিলেন।[11] আর এটা ছিল মানুষের পরীক্ষার জন্য। শয়তানের ধোঁকার বিরুদ্ধে জিততে পারলেই মানুষ তার শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখতে পারবে এবং আখেরাতে জান্নাত লাভে ধন্য হবে। নইলে ইহকাল ও পরকালে ব্যর্থকাম হবে। মানুষের প্রতি ফেরেশতাদের সিজদা করা ও ইবলীসের সিজদা না করার মধ্যে ইঙ্গিত রয়েছে এ বিষয়ে যে, মানুষ যেন প্রতি পদে পদে শয়তানের ব্যাপারে সতর্ক থাকে এবং আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের মাধ্যমে নিজের শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখে।