রবিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২১

তোমরা নামাযের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষতঃ মধ্যবর্তী নামাযের প্রতি এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে তোমরা বিনীতভাবে দাঁড়াও।”(সূরাহ বাকারা, আয়াত নং ২৩৮)

চেয়ারে বসে নামায পড়া জায়েয আছে কি? এক নজরে দেখেনেই কুরআন হাদিস কি ভলে

বর্তমানে প্রায় মসজিদেই অনেক মুসল্লীকে চেয়ারে বসে নামায আদায় করতে দেখা যায়। কিন্তু শরীয়তের বিধান অনুযায়ী চেয়ারে বসে নামায আদায় করাটা সঠিক হচ্ছে কিনা সেটা অনেকেই জানেন না।

জনসার্থে হাদিসটা কপি কিনবা সেয়ার।প্লিজ
সংগ্রহঃ www.koborki.blogspot.com

এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, বর্তমানে যারা চেয়ারে নামায পড়ছেন, তাদের অনেকেরই উজর-সমস্যা এতই সাধারণ যে, এ ধরনের সমস্যার কারণে চেয়ারে বসে নামায আদায় করাটা বৈধ হয় না। ফলে তাদের চেয়ারে বসে পড়া নামায আদায় হচ্ছে না। একটু কষ্ট করে চেয়ার ছাড়াই তারা নামায আদায় করতে পারেন। কিন্তু তারা সেটা না করে একটু আরামের জন্য চেয়ারে বসেই নামায আদায় করে যাচ্ছেন। এতে নামায আদায় করা সত্ত্বেও নামায শুদ্ধ না হওয়ার কারণে তারা গুনাহগার হচ্ছেন।

এজন্য নিজের উজরের অবস্হা প্রকাশ করে এ সংক্রান্ত মাসআলা বিজ্ঞ মুফতীগণের নিকট থেকে জেনে নেয়া একান্ত জরুরী। যাতে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত নামায সহীহ-শুদ্ধ হয়। বক্ষমান নিবন্ধে সংক্ষেপে বিষয়টি আলোচনা করার প্রয়াস পাব।

কিয়াম তথা দাঁড়ানো নামাযের একটি ফরজ রুকন। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন-

حَافِظُوا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلَاةِ الْوُسْطَىٰ وَقُومُوا لِلَّهِ قَانِتِين

“তোমরা নামাযের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষতঃ মধ্যবর্তী নামাযের প্রতি এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে তোমরা বিনীতভাবে দাঁড়াও।”

(সূরাহ বাকারা, আয়াত নং ২৩৮)

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসসিরগণ বলেন, এখানে নামাযে দাঁড়ানোর কথা বলা হয়েছে। (বাদায়িউস সানায়ি‘, ১ম খণ্ড, ২৮৭ পৃষ্ঠা)

তাই দাঁড়াতে সক্ষম হলে, ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নাতে মুআক্কাদাহ্‌ নামায দাঁড়িয়েই আদায় করতে হবে। এ সকল নামায বসে আদায় করলে, সহীহ হবে না।

(ফাতাওয়া শামী, ২য় খণ্ড, ৫৬৫ পৃষ্ঠা)

সংগ্রহঃ মৃত্যুর দুয়ারে দাড়িয়েও ভলবো তোমাকে ভালবাসি!এবং সংস্কারকবৃন্দ গ্রুপ।

জনসার্থেঃ হাদিসটা কপি কিনবা সেয়ার প্লিজ।

অবশ্য নফল নামায দাঁড়াতে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও বসে আদায় করা জায়িয আছে। তবে তাতে দাঁড়ানোর তুলনায় অর্ধেক সাওয়াব হবে।

(ফাতাওয়া শামী, ২য় খণ্ড, ৫৬৫ পৃষ্ঠা)

চুইটারঃ নিষ্ঠুর প্রেমঃ এবং সংস্কারকবৃন্দ পেইজ। জনসার্থেঃ হাদিসটা কপি কিনবা সেয়ার প্লিজ।

বিষয়টি একটি হাদীসে সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। হাদীসটি নিম্নরূপ–

عن عِمرانَ بنِ حُصَينٍ رضيَ اللهُ عنه، قال: سألتُ النبيَّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم عن صلاةِ الرَّجلِ وهو قاعدٌ، فقال: مَنْ صَلَّى قَائِمًا فَهُوَ أَفْضَلُ ، وَمَنْ صَلَّى قَاعِدًا فَلَهُ نِصْفُ أَجْرِ الْقَائِمِ

হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)কে বসে নামায আদায় করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, “কেউ যদি দাঁড়িয়ে নামায আদায় করে, তাহলে তা তার জন্য উত্তম। আর বসে নামায আদায় করলে সে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করার অর্ধেক সাওয়াব পাবে।”

(সহীহ বুখারী, ১ম খণ্ড, ১৫০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ১০৬৪/ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৩৫/ জামি‘ তিরমিযী, ১ম খণ্ড, ৮৫ পৃষ্ঠা)

এ হাদীসটি নফল নামাযের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কারণ, দাঁড়াতে সক্ষম হলে, ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নাতের মুআক্কাদাহ নামায বসে আদায় করা জায়িয নয়। তাই ইমাম তিরমিযী (রহ.) জামি‘ তিরমিযীতে হাদীসটি উল্লেখ করার পর লিখেছেন, “কতক আলেম এই হাদীসটির মর্ম সম্পর্কে বলেছেন, এটি নফলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তবে হযরত সুফিয়ান সাওরী (রহ.) বলেন, কেউ কোনো অসুস্হতা বা উজরের কারণে বসে নফল নামায আদায় করলে, সে দাঁড়িয়ে নামায আদায়ের সমান সাওয়াবই পাবে। এ সম্পর্কে হাদীসের বর্ণনা রয়েছে।”

(দ্রষ্টব্য : জামি‘ তিরমিযী, ১ম খণ্ড, ৮৫ পৃষ্ঠা)

অবশ্য দাঁড়াতে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও নফল নামায বসে পড়লে, জমিনে বসেই পড়তে হবে। চেয়ারে বসে পড়লে নামায সহীহ হবে না। জমিনে বসে হাঁটু বরাবর মাথা ঝুঁকিয়ে রুকু করতে হবে। সিজদা করতে সক্ষম হলে, জমিনেই সিজদা করতে হবে।

(ফাতাওয়া তাতারখানিয়া, ১ম খণ্ড, ১৭১ পৃষ্ঠা)

যিনি দাঁড়াতে সক্ষম, কিন্তু নিয়মমত রুকু-সিজদা করতে অক্ষম, রুকু-সিজদা করতে মারাত্মক কষ্ট হয় বা রোগ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে অথবা রোগ সারতে বিলম্ব হবে, এ ধরনের লোক দাঁড়িয়ে ইশারায় রুকু-সিজদা করে নামায আদায় করবেন। জমিনে বা চেয়ারে বসে নামায আদায় করলে নামায সহীহ হবে না। কারণ, নামাযে কিয়াম বা দাঁড়ানো একটি ফরজ। অপারগতা ছাড়া তা বাদ দিলে নামায সহীহ হবে না।

(বাদায়ি‘উস সানায়ি‘, ১ম খণ্ড, ১০৭ পৃষ্ঠা/ মাজমা‘উল আনহুর, ১ম খণ্ড, ২২৯ পৃষ্ঠা/ তাবইনুল হাকায়িক, ১ম খণ্ড, ৪৯২ পৃষ্ঠা)

সংগ্রহঃ কেন তুমি এতোটা নিষ্ঠুর হলে? এবং সংস্কারকবৃন্দ পেইজ।

জনসার্থেঃ হাদিসটা কপি কিনবা সেয়ার প্লিজ।

কেউ যদি কোনো কিছুর উপর ভর করে বা হেলান দিয়ে কিংবা টেক লাগিয়ে দাঁড়াতে পারেন, সরাসরি দাঁড়াতে পারেন না, তাহলে তিনি কিছুর উপর ভর করে বা টেক লাগিয়ে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করবেন। জমিনে বা চেয়ারে বসে ফরজ ওয়াজিব ও সুন্নাতে মুআক্কাদাহ নামায আদায় করলে সহীহ হবে না।

(ফাতহুল কাদীর, ২খণ্ড, ৩৩ পৃষ্ঠা/ ফাতাওয়া শামী, ২য় খণ্ড, ৫৬৭ পৃষ্ঠা)



জনসার্থেঃ হাদিসটা কপি কিনবা সেয়ার প্লিজ।

যিনি কিছুক্ষণ দাঁড়াতে পারেন, বেশী সময় দাঁড়াতে পারেন না এবং জমিনে বসতে সক্ষম, তিনি দাঁড়িয়ে নামায শুরু করবেন। যতক্ষণ সম্ভব দাঁড়িয়ে নামায আদায় করবেন। যখন কষ্ট হবে, জমিনে বসে বাকি নামায আদায় করবেন। রুকু-সিজদা নিয়মমতো করবেন। এমতাবস্হায় চেয়ারে বসে নামায আদায় করলে নামায সহীহ হবে না। যেমন, একজন মানুষ দীর্ঘ সময় দাঁড়াতে পারেন না, ফজরের নামাযে দীর্ঘ কিরাআত পড়া হয়, তিনি যদি জামা‘আতে ফজরের নামায আদায় করেন, তাহলে দাঁড়িয়ে শুরু করবেন। যতক্ষণ সম্ভব দাঁড়াবেন। যখন কষ্ট হবে, জমিনে বসে পড়বেন। তিনি চেয়ারে বসে নামায আদায় করতে পারবেন না।

(ফাতহুল কাদীর, ২য় খণ্ড, ৩৩ পৃষ্ঠা/ ফাতাওয়া শামী, ২য় খণ্ড, ৫৬৭পৃষ্ঠা)

যারা দাঁড়াতে এবং রুকু-সিজদা করতে অক্ষম, কিন্তু জমিনে যেকোনোভাবে বসতে সক্ষম, তারা তাদের পক্ষে যেভাবে সম্ভব সেভাবে জমিনে বসেই নামায আদায় করবেন। এ অবস্হায় চেয়ারে বসে আদায় করলে নামায সহীহ হবে না। জমিনে বসে তারা ইশারায় রুকু-সিজদা করবেন। হাঁটু বরাবর মাথা ঝুঁকিয়ে ইশারায় রুকু এবং আরেকটু বেশী ঝুঁকিয়ে সিজদা করতে হবে।

(বাদায়ি‘উস সানায়ি‘, ১ম খণ্ড, ২৮৪ পৃষ্ঠা)

এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-

الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللَّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَىٰ جُنُوبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُونَ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هَٰذَا بَاطِلًا سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

যারা (বুদ্ধিমানরা) দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে আল্লাহর স্মরণ করে, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্বন্ধে চিন্তা করে এবং বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি তা অনর্থক সৃষ্টি করেননি। আপনি পবিত্র। আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন।”

(সূরাহ আলে ইমরান, আয়াত নং ১৯১)

আল্লামা কুরতুবী (রহ.) বলেন, হযরত হাসান বসরীসহ আরো কয়েকজন মুফাসসির বলেছেন, “আয়াতটি নামায সম্পর্কে। অর্থাৎ (বুদ্ধিমান তারা) যারা নামায নষ্ট করে না। উজর হলে বসে বা শুয়ে হলেও নামায আদায় করে। সুতরাং আয়াত থেকে জানা গেল, নামায দাঁড়িয়ে আদায় করতে হবে। দাঁড়াতে সক্ষম না হলে বসে এবং তাও সম্ভব না হলে শুয়ে নামায আদায় করতে হবে।”

(তাফসীরে কুরতুবী, ৪র্থ খণ্ড, ১৯৮ পৃষ্ঠা)

মাবসূতে সারাখসিতে রয়েছে, অসুস্হ ব্যক্তির নামাযের ব্যাপারে মূলনীতি হচ্ছে এ আয়াত-“যারা দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে আল্লাহর স্মরণ করে।” (সূরাহ আলে ইমরান, আয়াত নং ১৯১)

এ আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে ইমাম যাহহাক (রহ.) বলেন, “আয়াতটি হচ্ছে অসুস্হ ব্যক্তির সামর্থ অনুযায়ী নামায আদায়ের বিবরণ।”

(মাবসূতে সারাখসি, ১ খণ্ড, ২১২ পৃষ্ঠা)

একটি হাদীসে বিষয়টির সুস্পষ্ট নির্দেশনা পাওয়া যায়। হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)কে অসুস্হ ব্যক্তির নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন,“দাঁড়িয়ে নামায আদায় করবে। তা সম্ভব না হলে বসে আদায় করবে। তাও সম্ভব না হলে শুয়ে নামায আদায় করবে।”

(সহীহ বুখারী, ১ম খণ্ড, ১৫০ পৃষ্ঠা/ জামি‘ তিরমিযী, ১ম খণ্ড, ৮৫ পৃষ্ঠা)

পোষ্ট বায়ঃ #আধার_কালো_রাতের_চাঁদঃ এবং সংস্কারকবৃন্দ গ্রুপ।

জনসার্থেঃ হাদিসটা কপি কিনবা সেয়ার প্লিজ।

এ হাদীস দ্বারা সুস্পষ্টভাবে বুঝা গেলো, দাঁড়ানো সম্ভব না হলে, তখনই কেবল বসে নামায আদায় করা যাবে। যতক্ষণ পর্যন্ত দাঁড়ানো সম্ভব, ততক্ষণ জমিনে বা চেয়ারে বসে নামায আদায় করলে সহীহ হবে না। আবার যখন যমিনে বসে নামায আদায় করা সম্ভব, তখন শুয়ে বা চেয়ারে বসে নামায আদায় করলে, তা সহীহ হবে না।

যিনি জমিনে স্বাভাবিকভাবে বসতে পারেন না, তবে অন্য কোনভাবে বসতে পারেন, যেমন, কোনকিছুর সাথে টেক লাগিয়ে বসতে পারেন, তিনি সেভাবেই জমিনে বসে নামায আদায় করবেন। তিনি চেয়ারে বসে আদায় করলে, নামায সহীহ হবে না।

(ফাতাওয়া শামী, ২য় খণ্ড, ৫৬৫ পৃষ্ঠা)

হাঁটুতে সমস্যার কারণে অনেকে হাঁটু ভাঁজ করতে পারেন না। এ ধরনের লোকের পক্ষে যদি পশ্চিম দিকে পা ছড়িয়ে জমিনে বসা সম্ভব হয়, তাহলে তারা সেভাবেই জমিনে বসে নামায আদায় করবেন। এমনি করে যে কোনভাবে জমিনে বসে নামায পড়তে সক্ষম হলে, তার জন্য সেভাবেই জমিনে বসে নামায আদায় করতে হবে। এ অবস্হায় তার জন্য চেয়ারে নামায পড়া জায়িয হবে না।

আর যদি কেউ কোনোভাবেই বসতে না পারেন, তাহলে তিনি চিৎ হয়ে শুয়ে নামায আদায় করবেন। তিনি পশ্চিমদিকে পা ছড়িয়ে দিবেন। ইশারায় রুকু-সিজদা করবেন। যদি সম্ভব হয়, তাহলে পশ্চিম দিকে পা না দিয়ে বরং হাঁটু খাড়া রাখবেন এবং মাথার নীচে বালিশ দিয়ে দিবেন, যাতে অন্তত কিছুটা বসার মতো হয় এবং চেহারা আকাশের দিকে না হয়ে কিবলামুখী হয়।

(ফাতাওয়া শামী, ২য় খণ্ড, ৫৬৯ পৃষ্ঠা)

তবে এই শেষাক্ত ক্ষেত্রে অর্থাৎ যদি কোনভাবেই জমিনে বসা সম্ভব না হয় বা কোনোভাবেই তারা জমিনে বসতে না পারেন, তাহলে তখন শুয়ে নামায পড়ার পরিবর্তে চেয়ারে বসে নামায আদায় করতে পারবেন। তখন চেয়ারে বসে ইশারায় রুকু-সিজদা করে নামায আদায় করবেন। সিজদার জন্য রুকুর তুলনায় অধিক মাথা ঝুঁকাতে হবে।

কিন্তু আমাদের দেশে যে সামান্য উজরেই অনেকে চেয়ারে বসে নামায পড়ছেন, তা সহীহ হচ্ছে না। বিশেষ করে তাদের দ্বারা মসজিদে ব্যাপকহারে চেয়ার ব্যবহারের দ্বারা নানারূপ অসুবিধার সৃষ্টি হচ্ছে। তাই ক্ষেত্রে সকলের সচেতন হওয়া কর্তব্য।


---------------------------ধন্যবান্তে_______________

                          Tushr Islam Rakib

শুক্রবার, ১ জানুয়ারি, ২০২১

আদম সূষ্টির কাহিনি:

আল্লাহ একদা ফেরেশতাদের ডেকে বললেন, আমি পৃথিবীতে ‘খলীফা’ অর্থাৎ প্রতিনিধি সৃষ্টি করতে চাই। বল, এ বিষয়ে তোমাদের বক্তব্য কি? তারা (সম্ভবতঃ ইতিপূর্বে সৃষ্ট জিন জাতির তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকে) বলল, হে আল্লাহ! আপনি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে আবাদ করতে চান, যারা গিয়ে সেখানে ফাসাদ সৃষ্টি করবে ও রক্তপাত ঘটাবে? অথচ আমরা সর্বদা আপনার হুকুম পালনে এবং আপনার গুণগান ও পবিত্রতা বর্ণনায় রত আছি। এখানে ফেরেশতাদের উক্ত বক্তব্য আপত্তির জন্য ছিল না, বরং জানার জন্য ছিল। আল্লাহ বললেন, আমি যা জানি, তোমরা তা জানো না (বাক্বারাহ ২/৩০)। অর্থাৎ আল্লাহ চান এ পৃথিবীতে এমন একটা সৃষ্টির আবাদ করতে, যারা হবে জ্ঞান ও ইচ্ছাশক্তি সম্পন্ন এবং নিজস্ব বিচার-বুদ্ধি ও চিন্তা-গবেষণা সহকারে স্বেচ্ছায়-সজ্ঞানে আল্লাহর বিধান সমূহের আনুগত্য করবে ও তাঁর ইবাদত করবে। ফেরেশতাদের মত কেবল হুকুম তামিলকারী জাতি নয়।

খলীফা অর্থ :

এখানে ‘খলীফা’ বা প্রতিনিধি বলে জিনদের পরবর্তী প্রতিনিধি হিসাবে বনু আদমকে বুঝানো হয়েছে, যারা পৃথিবীতে একে অপরের প্রতিনিধি হবে (ইবনু কাছীর)। অথবা এর দ্বারা আদম ও পরবর্তী ন্যায়নিষ্ঠ শাসকদের বুঝানো হয়েছে, যারা জনগণের মধ্যে আল্লাহর আনুগত্য ও ইনছাফপূর্ণ শাসক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করবে। কেননা ফাসাদ সৃষ্টিকারী ও অন্যায় রক্তপাতকারী ব্যক্তিরা আল্লাহর প্রতিনিধি নয় (ইবনু জারীর)। তবে প্রথম ব্যাখ্যাই অগ্রগণ্য, যা ফেরেশতাদের জবাবে প্রতীয়মান হয় যে, এমন প্রতিনিধি আপনি সৃষ্টি করবেন, যারা পূর্ববর্তী জিন জাতির মত পৃথিবীতে গিয়ে ফাসাদ ও রক্তপাত ঘটাবে। বস্ত্ততঃ ‘জিন জাতির উপর ক্বিয়াস করেই তারা এরূপ কথা বলে থাকতে পারে’ (ইবনু কাছীর)।

অতঃপর আল্লাহ আদমকে সবকিছুর নাম শিক্ষা দিলেন। ‘সবকিছুর নাম’ বলতে পৃথিবীর সূচনা থেকে লয় পর্যন্ত ছোট-বড় সকল সৃষ্টবস্ত্তর ইল্ম ও তা ব্যবহারের যোগ্যতা তাকে দিয়ে দেওয়া হ’ল।[9] যা দিয়ে সৃষ্টবস্ত্ত সমূহকে আদম ও বনু আদম নিজেদের অনুগত করতে পারে এবং তা থেকে ফায়েদা হাছিল করতে পারে। যদিও আল্লাহর অসীম জ্ঞানরাশির সাথে মানবজাতির সম্মিলিত জ্ঞানের তুলনা মহাসাগরের অথৈ জলরাশির বুক থেকে পাখির ছোঁ মারা এক ফোঁটা পানির সমতুল্য মাত্র।[10] বলা চলে যে, আদমকে দেওয়া সেই যোগ্যতা ও জ্ঞান ভান্ডার যুগে যুগে তাঁর জ্ঞানী ও বিজ্ঞানী সন্তানদের মাধ্যমে বিতরিত হচ্ছে ও তার দ্বারা জগত সংসার উপকৃত হচ্ছে। আদমকে সবকিছুর নাম শিক্ষা দেওয়ার পর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য আল্লাহ তাকে ফেরেশতাদের সম্মুখে পেশ করলেন। কুরআনে কেবল ফেরেশতাদের কথা উল্লেখিত হ’লেও সেখানে জিনদের সদস্য ইবলীসও উপস্থিত ছিল (কাহফ ১৮/৫০)। অর্থাৎ আল্লাহ চেয়েছিলেন, জিন ও ফেরেশতা উভয় সম্প্রদায়ের উপরে আদম-এর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হৌক এবং বাস্তবে সেটাই হ’ল। তবে যেহেতু ফেরেশতাগণ জিনদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ও উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন, সেজন্য কেবল তাদের নাম নেওয়া হয়েছে। আর দুনিয়াতে জিনদের ইতিপূর্বেকার উৎপাত ও অনাচার সম্বন্ধে ফেরেশতারা আগে থেকেই অবহিত ছিল, সেকারণ তারা মানুষ সম্বন্ধেও একইরূপ ধারণা পোষণ করেছিল এবং প্রশ্নের জবাবে নেতিবাচক উত্তর দিয়েছিল। উল্লেখ্য যে, ‘আল্লাহ জিন জাতিকে আগেই সৃষ্টি করেন গনগনে আগুন থেকে’ (হিজর ১৫/২৭)। কিন্তু তারা অবাধ্যতার চূড়ান্ত করে।

আদমকে ফেরেশতাদের সম্মুখে পেশ করার পর আল্লাহ ফেরেশতাদেরকে ঐসব বস্ত্তর নাম জিজ্ঞেস করলেন। কিন্তু সঙ্গত কারণেই তারা তা বলতে পারল না। তখন আল্লাহ আদমকে নির্দেশ দিলেন এবং তিনি সবকিছুর নাম বলে দিলেন। ফলে ফেরেশতারা অকপটে তাদের পরাজয় মেনে নিল এবং আল্লাহর মহত্ত্ব ও পবিত্রতা ঘোষণা করে বলল, হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে যতটুকু শিখিয়েছেন, তার বাইরে আমাদের কোন জ্ঞান নেই। নিশ্চয়ই আপনি সর্বজ্ঞ ও দূরদৃষ্টিময়’ (বাক্বারাহ ২/৩২)। অতঃপর আল্লাহ তাদের সবাইকে আদমের সম্মুখে সম্মানের সিজদা করতে বললেন। সবাই সিজদা করল, ইবলীস ব্যতীত। সে অস্বীকার করল ও অহংকারে স্ফীত হয়ে প্রত্যাখ্যান করল। ফলে সে কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হ’ল (বাক্বারাহ ২/৩৪)। ইবলীস ঐ সময় নিজের পক্ষে যুক্তি পেশ করে বলল, ‘আমি ওর চাইতে উত্তম। কেননা আপনি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছেন আর ওকে সৃষ্টি করেছেন মাটি দিয়ে’। আল্লাহ বললেন, তুই বের হয়ে যা। তুই অভিশপ্ত, তোর উপরে আমার অভিশাপ রইল পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত’ (ছোয়াদ ৩৮/৭৬-৭৮; আ‘রাফ ৭/১২)

সিজদার ব্যাখ্যা ও উদ্দেশ্য :

আদমকে সৃষ্টি করার আগেই আল্লাহ ফেরেশতাদেরকে আদমের প্রতি সিজদা করার কথা বলে দিয়েছিলেন (হা-মীম সাজদাহ/ফুছছিলাত ৪১/১১)। তাছাড়া কুরআনের বর্ণনা সমূহ থেকে একথা স্পষ্ট হয় যে, আদমকে সিজদা করার জন্য আল্লাহর নির্দেশ ব্যক্তি আদম হিসাবে ছিল না, বরং ভবিষ্যৎ মানব জাতির প্রতিনিধিত্বকারী হিসাবে তাঁর প্রতি সম্মান জানানোর জন্য জিন ও ফিরিশতাদের সিজদা করতে বলা হয়েছিল। এই সিজদা কখনোই আদমের প্রতি ইবাদত পর্যায়ের ছিল না। বরং তা ছিল মানবজাতির প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন ও তাদেরকে সকল কাজে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দানের প্রতীকী ও সম্মান সূচক সিজদা মাত্র।

ওদিকে কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হ’লেও ইবলীস কিন্তু আল্লাহকে সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা হিসাবে অস্বীকার করেনি। বরং আল্লাহ যখন তাকে ‘অভিসম্পাৎ’ করে জান্নাত থেকে চিরদিনের মত বিতাড়িত করলেন, তখন সে আল্লাহ্কে ‘রব’ হিসাবেই সম্বোধন করে প্রার্থনা করল, قَالَ رَبِّ فَأَنظِرْنِي إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ- ‘হে আমার প্রভু! আমাকে আপনি ক্বিয়ামত পর্যন্ত অবকাশ দিন’ (হিজর ১৫/৩৬, ছোয়াদ ৩৮/৭৯)। আল্লাহ তার প্রার্থনা মঞ্জুর করলেন। অতঃপর সে বলল, ‘হে আমার পালনকর্তা! আপনি যেমন আমাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, আমিও তেমনি তাদের সবাইকে পৃথিবীতে নানারূপ সৌন্দর্যে প্রলুব্ধ করব এবং তাদেরকে পথভ্রষ্ট করে দেব। তবে যারা আপনার একনিষ্ঠ বান্দা, তাদের ব্যতীত’ (হিজর ১৫/৩৪-৪০; ছোয়াদ ৩৮/৭৯-৮৩)। আল্লাহ তাকে বললেন, তুমি নেমে যাও এবং এখান থেকে বেরিয়ে যাও। তুমি নীচুতমদের অন্তর্ভুক্ত। এখানে তোমার অহংকার করার অধিকার নেই’ (আ‘রাফ ৭/১৩)। উল্লেখ্য যে, ইবলীস জান্নাত থেকে বহিষ্কৃত হ’লেও মানুষের রগ-রেশায় ঢুকে ধোঁকা দেওয়ার ও বিভ্রান্ত করার ক্ষমতা আল্লাহ তাকে দিয়েছিলেন।[11] আর এটা ছিল মানুষের পরীক্ষার জন্য। শয়তানের ধোঁকার বিরুদ্ধে জিততে পারলেই মানুষ তার শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখতে পারবে এবং আখেরাতে জান্নাত লাভে ধন্য হবে। নইলে ইহকাল ও পরকালে ব্যর্থকাম হবে। মানুষের প্রতি ফেরেশতাদের সিজদা করা ও ইবলীসের সিজদা না করার মধ্যে ইঙ্গিত রয়েছে এ বিষয়ে যে, মানুষ যেন প্রতি পদে পদে শয়তানের ব্যাপারে সতর্ক থাকে এবং আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের মাধ্যমে নিজের শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখে।

শনিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২০

তারাবী নামাজে তাড়াহুড়ো করার বিধান কি?


জওয়াব : তারাবির নামাজ আদায়ে অতি মাত্রায় তাড়াহুড়ো করা এবং তারাবির নামাজ আদায়ে অবহেলা করা একটি শরিয়ত পরিপন্থী কাজ। যেমন, মুরগির ঠোকর দেয়ার মত করে নামাজ আদায় করা এবং তারাবির নামাজে কোরান খতম করার উদ্দেশ্যে তাড়াতাড়ি কিরাত পড়া। শেখ জামাল উদ্দিন আল কাসেমি রহ. বলেন, মনে রাখতে হবে, তারাবির নামাজ রমজান মাসে অবশ্যই সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ, অধিকাংশ মসজিদের ইমামদের দেখা যায়, তারা তাদের মসজিদ সমূহে তারাবির নামাজ তাড়াহুড়ো করে তারাবির নামাজ আদায় করতে অভ্যস্ত। ফলে তারা নামাজের আরকান সুন্নাত ইত্যাদি আদায়ে অবহেলা করে। নামাজ তাড়াহুড়ো করে শেষ করার প্রবণতায় তারা রুকু সেজদা আদায়ে ধীরস্থিরতা ছেড়ে দেয়, কিরাত পড়তে তাড়াহুড়ো করে এবং কোরানের আয়াতের শব্দগুলোকে পরিবর্তন করে ফেলে। রএ ধরনের নামাজ এবং নেক আমল দ্বারা শয়তান ঈমানদারদের ধোঁকা দেয়া ও তাদের বোকা বানানোর চক্রান্ত। শয়তান তাদের আমল করা সত্ত্বেও আমলটিকে নষ্ট করে দেয় এবং যারা এ ধরনের তাড়াহুড়োর অনুকরণ করে, তাদের নামাজ অনেক সময় ইবাদতের পরিবর্তে তা হাসি ঠাট্টায় পরিণত হয়। তাই আমরা বলি, একজন মুসলি¬র উপর কর্তব্য হল, সে তার নামাজের বাহ্যিক যেমন: কিরাত, দাঁড়ানো, রুকু-সেজদা ইত্যাদি এবং আধ্যাত্মিক যেমন: একাগ্রতা, অন্তরের উপস্থিতি, পরিপূর্ণ ইখলাস, কিরাত এবং নামাজের তাসবিহ ইত্যাদির অর্থের মধ্যে চিন্তা ফিকির করা। নামাজের বাহ্যিক সৌন্দর্য হল, মানুষের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সাথে সম্পৃক্ত আর নামাজের বাতিনি সৌন্দর্য,সৌন্দর্য নামাজির অন্তর বা আত্মার সাথে সম্পৃক্ত। ইমাম গাজালি রহ. বলেন, যে ব্যক্তি নামাজের বাহ্যিক দিকটি লক্ষ্য রাখেন কিন্তু আধ্যাত্মিকতার প্রতি তেমন কোন গুরুত্ব দেন না, তার একটি দৃষ্টান্ত ঐ ব্যক্তির মত যে কোন একজন বাদশাকে একটি মৃত ছাগলের বাচ্চা উপহার দিল আর যে ব্যক্তি নামাজের জাহেরি কাজ গুলোতে শৈথিল্য প্রদর্শন করে তার দৃষ্টান্ত ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে, কোন বাদশাকে একটি কান কাটা, উভয় চক্ষু নষ্ট এমন একটি জন্তু হাদিয়া দিলেন। মনে রাখতে হবে, এখানে এ দুই জন লোকই একজন বাদশা মানহানি করেছে এবং বাদশার মর্যাদাকে খাট করেছে। তবে উভয় ব্যক্তির অপরাধ অবশ্যই এক রকম নয়, ফলে তাদের উভয়ের শাস্তি ও এক রকম হবে না। তার পর ইমাম গাজ্জালি রহ. বলেন নিশ্চয় তুমি তোমার প্রভুকে তোমার নামাজ হাদিয়া দিচ্ছ, তোমাকে অবশ্যই এ ধরনের নামাজ হা দিয়া দেয়ার থেকে বিরত থাকতে হবে ,যে নামাজ দ্বারা তোমাকে শাস্তির সম্মুখীন হতে হয়। শেখ উসাইমিন রহ. রাসূল সা. এর কিয়ামুল¬াইল এবং তার সাহাবিদের কিয়ামুল¬াইলের আলোচনা করতে গিয়ে এক জায়গায় বলেন : বর্তমানে অধিকাংশ মানুষ যেভাবে তারাবির নামাজ আদায় করেন তা সম্পূর্ণ শরিয়তের পরিপন্থী, তারা তারাবির নামাজ এত দ্রুত আদায় করে, নামাজের ওয়াজিব, নামাজে ধীরস্থিরতা এবং শান্তি সৃষ্ট তা বজায় ইত্যাদিতর প্রতি কোন গুরুত্ব প্রদান তারা করে না, অথচ এ গুলো নামাজের রুকন,যে গুলো আদায় ব্যতীত নামাজ শুদ্ধই হয় না। তারা তাদের পিছনের নামাজি- অসুস্থ, রুগি, দুর্বল এবং বৃদ্ধদের শুধু শুধু কষ্ট দেয় এবং তারা নিজেদের উপর অত্যাচার করে এবং অন্যদের উপরও অত্যাচার করে। বিজ্ঞ আলেমগন বলেন, একজন ইমামের জন্য এত তাড়াহুড়ো করা, যাতে তার পিছনে নামাজিরা সুন্নাত আদায় করতে পারে না, তাহলে তার নামাজ অবশ্যই মাকরূহ হবে। আর যদি ইমাম এমন তাড়াহুড়ো করে যার ফলে নামাজিরা তার পিছনে ফরজ আদায় করতেও সক্ষম হয় না, তার পরিণতি কি হতে পারে ? আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন। শেখ মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহাব রহ. কে তারাবির নামাজে তাড়াহুড়ো প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তরে বলেন, তিনি প্রশ্ন কারিকে বলেন - তোমার কথা ইমাম তাড়াতাড়ি করলে তার পিছনে অনেক মানুষ নামাজ আদায় করবে আর যখন সে ধীরস্থির ভাবে নামাজ আদায় করে তখন তার পিছনে নামাজির সংখ্যা কমে যাবে- এর আলোকে আমি বলব, শয়তানের উদ্দেশ্য হল মানুষকে নেক আমল হতে বিরত রাখা, আর শয়তান যখন তা করতে সক্ষম হয়ে উঠে না, তখন তার জীবন মরণ চেষ্টা থাকে মানুষের আমলকে নষ্ট করা। দু:খের বিষয় হল, আমাদের দেশের অধিকাংশ ইমামরা তারাবির নামাজে এমন সব কাজ করে যা অজ্ঞতা ছাড়া আর কিছুই বলা চলে না। তারা অর্থহীন নামাজ আদায় করে, তারা ঠিক মত রুকু করে না এবং ঠিক মত সেজদা করে না। অথচ ঠিক মত রুকু-সেজদা না করলে নামাজই শুদ্ধ হয় না। মনে রাখতে হবে,মূলত: নামাজের উদ্দেশ্যই হল একাগ্রচিত্তে আল¬াহর সম্মুখে বিনয় ও নম্রতার সাথে দন্ডায়মান হওয়া এবং কোরান তেলাওয়াতে চলাকালে তা হতে উপদেশ গ্রহণ করা। কিন্তু নামাজের এ মহৎ উদ্দেশ্য তাড়াহুড়ো করে নামাজ আদায় করলে তা পূরণ হয় না। সুতরাং ইমামের সাথে তাড়াহুড়ো করে বিশ রাকাত আদায় করার চেয়ে ধীরস্থির খুশু ও বিনয়ের সাথে ইমামের পিছনে দশ রাকাত পড়াই উত্তম। রাকাতের আধিক্যের চেয়ে সুন্দরভাবে নামাজ আদায়ের প্রতি যত্নবান হও;আর ইহাই তোমার জন্য উপকারী ও সর্বোত্তম। আমরা যে কথাগুলো আলোচনা করলাম, এর উপরই আমল করা উচিত। আর যদি ইমাম ও মোক্তাদির মাঝে এ নিয়ে মতভেদ দেখা দেয় এবং মোক্তাদিরা তাড়াহুড়ো নামাজে অভ্যস্ত এবং তারা যদি ইমাম এর সাথে সুন্নাত অনুযায়ী নামাজ আদায় করতে অসম্মতি জানান তখনও ইমামের জন্য করণীয় হল, সে ধীরস্থির নামাজ আদায়ে উৎসাহী হবে এবং কোন ভাবেই নামাজে এমন তাড়াহুড়ো করবে না যাতে ধীরস্থিরতার বিঘ্ন হয়। এ সকল ক্ষেত্রে ইমাম সাহেবের জন্য নামাজে পূর্ণ রুকু সেজদা এবং ধীরস্থিরতা বজায় রেখে তাড়া হুড়া করে দীর্ঘ লম্বা কিরাত পড়ার চেয়ে ছোট কিরাত পড়া উত্তম। অনুরূপ ভাবে দীর্ঘ কিরাত এবং রুকু সেজদায় ধীরস্থিরতা বজায় রেখে, দশ রাকাত নামাজ আদায় করা তাড়াহুড়ো করে বিশ রাকাত নামাজ আদায় করার তুলনায় উত্তম। কারণ, নামাজের আসল এবং চালিকা শক্তিই হল মানুষের মন আল¬াহর দিক ধাবিত হওয়া। অনেক সময় আছে তখন কম বেশির চেয়ে উত্তম হয়ে থাকে। কিতাবুস্সুনান ওয়াল মুবতাদিয়াত গ্রন্থকার বলেন,অনেক ইমামের নামাজ পাগলের নামাজের সাদৃশ্য। বিশেষ করে তারাবির নামাজ তিনি বলেন তাদের দেখা যায় তারা বিশ মিনিটে তেইশ রাকাত নামাজ আদায় করেন এবং প্রত্যেক রাকাতে তা সুরা আলা, দোহা এবং সুরা রহমানের এক চতুর্থাংশ পড়ে নামাজ শেষ করেন। এ ধরনের নামাজ সকলের ঐক্য মতের ভিত্তিতে সম্পূর্ণ বাতিল, কারণ তাদের নামাজ হল মুনাফেকদের নামাজ সমতুল্য। আল্লাহ মুনাফেকদের নামাজ সম্পর্ক বলেন: و إذا قاموا إلى الصلاة قاموا كسالى يراءون الناس ولا يذكرون الله إلا قليلا. এবং যখন তারা নামাজে দন্ডায়মান হয় তখন তারা অলসতা করে । তারা লোক দেখানো নামাজ আদায় করে। এবং তারা খুব কমই আল¬াহকে স্মরণ করে। তাদের নামাজ সফল মুমিনরেদর নামাজের মত নয় যাদের নামাজ সম্পর্কে আল¬াহ বলেন: قد أفلح المؤمنون الذين هم في صلاتهم خاشعون. অবশ্যই ঐ সকল ঈমানদাররা সফল কাম যার তাদের নামাজে বিনয়ী। এবং তাদের নামাজ রাসূল সা. যে ধরনের নামাজ আদায় হতে বারণ এবং নিন্দা করেছেন -কাকের ঠোকর, নামাজে চুরি ইত্যাদি-সে নামাজের মতই নয়। আল্লামা দারমি আবুল আলিয়া হতে বর্ণনা করেন, আমরা বিভিন্ন লোকের নিকট হতে ইলম অর্জন করার জন্য উপস্থিত হতাম, তখন আমরা তার নামাজের প্রতি লক্ষ্য করতাম, যখন দেখতাম তার নামাজ সুন্দর,আমরা বলতাম তার অন্য সব কিছুই সুন্দর। আর যখন দেখতে পেতাম তার নামাজ অসুন্দর, আমরা তার থেকে দুরে সরে যেতাম এবং বলতাম তার অন্য সব কিছুই এর চেয়েও বেশি অসুন্দর।

শুক্রবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২০

যেভাবে 'তারাবী' এলো...



রোজার সঙ্গে সঙ্গে যে ইবাদতের নাম সর্বাগ্রে আসে তা হলো তারাবির নামাজ। ‘তারাবি’ শব্দের আভিধানিক অর্থ বিশ্রাম বা আরাম। তারাবির নামাজ মূলত তাহাজ্জুদ নামাজেরই আরেকটি নাম। কিন্তু রমজান মাসে সর্বসাধারণ যেন এ থেকে কল্যাণকামী হতে পারে তাই রাতের প্রথম ভাগে অর্থাৎ এশার নামাজের পরপরই এ নামাজ পড়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

তারাবির নামাজ সম্পর্কে হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, “একদিন গভীর রাতে মহানবি (সা.) মসজিদে গেলেন এবং নামাজ পড়লেন। কিছু লোকও নবিজীর পেছনে তখন নামাজ পড়লেন। ভোর হওয়ার পর সাহাবায়ে কেরাম পরস্পরের সঙ্গে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করায় দ্বিতীয় রাতে লোকসংখ্যা আরও বেড়ে গেল এবং তারা মহানবির (সা.) সঙ্গে নামাজ পড়ল। সেদিন ভোর হওয়ার পর লোকদের মধ্যে আরও বেশি আলোচনা হলো এবং তৃতীয় রাতে মসজিদের লোক সমাগম আরও বেশি হলো। মহানবি (সা.) বাইরে বের হয়ে নামাজ পড়লেন আর তারাও নবিজীর সঙ্গে নামাজ পড়লেন। যখন চতুর্থ রাত এলো তখন এত লোক সমাগম হলো যে, মসজিদে স্থান সংকুলান হলো না। কিন্তু তিনি এ রাতে তারাবির নামাজের জন্য বের হলেন না। ভোর হলে ফজরের নামাজের জন্য বের হলেন এবং ফজরের নামাজ শেষে লোকদের দিকে মুখ ফিরিয়ে তাশাউদ পাঠের পর বললেন- তোমাদের বিষয়টি আমার কাছে গোপন ছিল না। কিন্তু আমি আশঙ্কা করছিলাম, এ নামাজ না আবার তোমাদের ওপর ফরজ করে দেওয়া হয়। আর তোমরা তা পালনে ব্যর্থ হও। মহানবি (সা.) ইন্তেকাল করলেন এবং এ নামাজের বিষয়টি তেমনই রইল”। (বুখারি)।

মহানবি (সা.) নিজে তারাবি নামাজ পড়েছেন এবং সাহাবায়ে কিরামকে পড়ার জন্য আদেশ দিয়েছেন। তারাবি নামাজের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে উল্লেখ আছে, মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের আশায় রমজানে তারাবির নামাজ আদায় করে তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়’। (বুখারি, মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ)। হযরত আমর বিন মুররাহ আল-জুহানী হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- “কুযাআ’হ গোত্রের এক ব্যক্তি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে বলল- হে আল্লাহর রাসুল! আমি যদি এই মর্মে সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ ছাড়া (ইবাদতের উপযুক্ত) কোনো উপাস্য নেই এবং আপনি আল্লাহর রাসুল, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করি, রমজান মাসের সিয়াম পালন করি, তারাবিহ সালাত আদায় করি ও জাকাত প্রদান করি, তাহলে আমার ব্যাপারে আপনার মতামত কি? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- ‘যে ব্যক্তি এর উপর মৃত্যুবরণ করবে সে সত্যবাদী ও শহীদদের মধ্যে গণ্য হবে”। (ইবনে খুযায়মা, ইবনে হিব্বান, তারগীব)

আল্লাহ তায়ালার ভালোবাসা পেতে হলে নফল ইবাদত একান্ত প্রয়োজন। আমরা যেন পবিত্র এই রমজানে ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি অনেক বেশি নফল ইবাদত করতে পারি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।

মঙ্গলবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২০

পবিত্র মাহে রমজান শুরু 25 এপ্রিল.




২০২০ সালের রমজানের প্রথম রোজা হবে ২৫ এপ্রিল। ২৪ এপ্রিল (শুক্রবার) রমজানের চাঁদ দেখা যাবে। ইসলামের রীতি অনুযায়ী চাঁদ দেখার ওপর নির্ভরশীল আরবি মাস। চাঁদ দেখার মাধ্যমেই সারাবিশ্বের মুসলিমরা মাসব্যাপী রোজা পালন করেন। আকাশ গবেষক ও জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা যাই বলুক না কেন, মুসলিম বিশ্ব চাঁদ দেখেই পালন করবেন পবিত্র রমজান মাসের রোজা। এটাই ইসলামের নীতি।এমন খবর জানিয়েছে জিওনিউজ।

যেহেতু রমজানের রোজা চাঁদ দেখার ওপর নির্ভরশীল। শাবান মাসের ২৯ তারিখ (২৪ এপ্রিল) যদি রমজানের চাঁদ দেখা যায় তবে ২৪ তারিখ তারাবিহ পড়ে ভোর রাতে সেহরি খেতে হবে। ২৫ এপ্রিল হবে রমজানের প্রথম রোজা। শাবান ৩০ দিন পূর্ণ হলে সে হিসেবে রমজানের প্রথম রোজা হবে ২৬ এপ্রিল।


এদিকে এ বছর বাংলাদেশে আরবি ১৪৪১ হিজরি সনের সপ্তম মাস রজব ৩০ দিন পূর্ণ হয়েছিল। সৌদি আরবে রজব মাস ছিল ২৯ দিনে। শাবন মাসে এসে সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবধান দুদিনে এসে দাঁড়িয়েছে।

উল্লেখ্য, মুসলিম উম্মাহর কাছে রমজান মাস ও রোজা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাবান। সব মুসলিমই জ্যোতির্বিজ্ঞানের গবেষণার চেয়ে খালি চোখে চাঁদ দেখে রোজা পালন করতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। যদিও বিগত কয়েক বছর ধরে রোজা ও রমজানের তারিখ প্রযুক্তির কল্যাণে খালি চোখে চাঁদ দেখার আগেই নির্ধারণ হয়ে যায়।

বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

📿🤲🏾📿আল কুরআনের আলো📿🤲🏾📿


সূরা আল-আন'আম ১০০ ও ১০১ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-

وَجَعَلُوا لِلَّهِ شُرَكَاءَ الْجِنَّ وَخَلَقَهُمْ وَخَرَقُوا لَهُ بَنِينَ وَبَنَاتٍ بِغَيْرِ عِلْمٍ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى عَمَّا يَصِفُونَ ﴿١٠٠﴾ بَدِيعُ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ أَنَّى يَكُونُ لَهُ وَلَدٌ وَلَمْ تَكُنْ لَهُ صَاحِبَةٌ وَخَلَقَ كُلَّ شَيْءٍ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ ﴿١٠١﴾ 

তারা জ্বিনকে আল্লাহর অংশী স্থাপন করে, অথচ তিনিই ওদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং ওরা অজ্ঞানতাবশতঃ আল্লাহর প্রতি পুত্র-কন্যা আরোপ করে। তিনি মহিমার্নিত এবং ওরা যা বলে, তিনি তার ঊর্ধ্বে। তিনি আকাশমন্ডলী ও ভূমন্ডলের উদ্ভাবনকর্তা, তাঁর সন্তান হবে কিরূপে? তাঁর তো কোন স্ত্রী নেই, তিনিই তো সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন(১) এবং প্রত্যেক বস্তু সম্বন্ধে তিনিই সবিশেষ অবহিত। -সূরা আল-আন'আম (আয়াত-১০০-১০১)।

(১) অর্থাৎ, যেমন আল্লাহ তাআলা এই সমস্ত জিনিসকে সৃষ্টি করার ব্যাপারে এক ও একক, তাঁর কোন শরীক নেই, অনুরূপ তিনিই এই যোগ্যতার দাবী রাখেন যে, একমাত্র কেবল তাঁরই ইবাদত করা হোক। তাঁর ইবাদতে অন্য কাউকে শরীক স্থির করা না হোক। কিন্তু মানুষ এই একক সত্তাকে বাদ দিয়ে জ্বিনদেরকে তাঁর শরীক বানিয়ে নিয়েছে। অথচ তারাও আল্লাহ কর্তৃক সৃষ্ট। মুশরিকরা তো মূর্তির অথবা কবরে সমাধিস্থ ব্যক্তিবর্গের পূজা করত। কিন্তু এখানে বলা হয়েছে যে, তারা জ্বিনদেরকে আল্লাহর শরীক বানিয়ে রেখেছে। আসলে ব্যাপার হল, এখানে জ্বিনদের বলতে শয়তানদেরকে বুঝানো হয়েছে এবং শয়তানদের কথা অনুযায়ীই শিরক করা হয়, তাই প্রকৃতপক্ষে পূজা ও উপাসনা শয়তানেরই করা হয়। এই বিষয়টাকে কুরআন কারীমের বিভিন্ন স্থানে বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন, সূরা নিসার ১১৭নং, সূরা মারয়্যামের ৪৪ নং, সূরা ইয়াসীনের ৬০ নং এবং সূরা সাবা’র ৪১ নং আয়াতে। (তাফসীরে আহসানুল বায়ান)

শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৯

মুহাম্মাদ (সাঃ) মৃত্যুর পর...




৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর ইন্তিকালের পর তার পরিবারের সদস্যরা যখন তার দাফনের কাজে ব্যস্ত ছিলেন তখন মদিনার আনসারদের মধ্যে তার উত্তরসূরি নিয়ে মতপার্থক্য দেখা দেয়। উমর ও আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ দুজনেই আবু বকরের প্রতি তাঁদের আনুগত্য প্রকাশ করেন।

মদিনার আনসার ও মুহাজিররা অচিরেই তাদের অনুসরণ করে। আবু বকর (রা.) এভাবে ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রথম খলিফা (খলিফা রাসুলুল্লাহ বা আল্লাহর রাসুলের উত্তরাধিকারী) হিসেবে অভিষিক্ত হন এবং ইসলামের প্রচারের জন্য কাজ শুরু করেন। এর মাধ্যমে খিলাফত নামক নতুন রাজনৈতিক প্রতিষ্টান গড়ে ওঠে। প্রথমে তাকে বিদ্রোহী আরব গোত্রগুলোকে দমন করতে হয় যারা ইসলাম ত্যাগ করে পূর্ব ব্যবস্থায় ফিরে গিয়েছিল।

আবু বকরের ক্ষমতালাভের পর খুব দ্রুত সমস্যা মাথাচাড়া দেয় এবং তা রাষ্ট্রের জন্য হুমকি হয়ে ওঠে। মুহাম্মাদ (সা.) এর জীবদ্দশাতেই কিছু ধর্মদ্রোহিতার ঘটনা ঘটে এবং এ সংক্রান্ত সর্বপ্রথম সংঘর্ষ তার জীবদ্দশাতেই হয়। ধর্মত্যাগের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে তা আরবের প্রত্যেকটি গোত্রকে প্রভাবিত করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুরো গোত্র ধর্মত্যাগ করে। কিছু ক্ষেত্রে ইসলামকে অস্বীকার না করলেও জাকাত দিতে অস্বীকারের ঘটনা ঘটে।

অনেক গোত্রীয় নেতা নিজেকে নবী দাবি করা শুরু করে। ধর্মত্যাগ ইসলামি আইনে সর্বোচ্চ ধরনের অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। আবু বকর বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন।এর মাধ্যমে রিদ্দার যুদ্ধ শুরু হয়। মধ্য আরবের ধর্মত্যাগীদের নেতৃত্ব ছিল স্বঘোষিত নবী মুসাইলিমা। অন্যরা দক্ষিণ ও পূর্বের অন্যান্য অঞ্চল যেমন বাহরাইন, মাহরা ও ইয়েমেনে নেতৃত্বে দিচ্ছিল।

আবু বকর বিদ্রোহ দমনের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। তিনি মুসলিম সেনাবাহিনীকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করেন। সবচেয়ে শক্তিশালী ও প্রাথমিক বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন খালিদ বিন ওয়ালিদ। বিদ্রোহীদের শক্তিশালী বাহিনীগুলোর সাথে লড়াইয়ের জন্য খালিদের সেনাদের ব্যবহার করা হয়। অন্যান্য সেনাদলগুলো তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ বিদ্রোহীদের মোকাবেলায় ব্যবহার করা হত।

আবু বকরের পরিকল্পনা ছিল প্রথমে পশ্চিম ও মধ্য আরব (যা মদিনার নিকটবর্তী ছিল) নিষ্কণ্টক করা, এরপর মালিক ইবনে নুয়ায়রাহকে মোকাবেলা করা ও শেষে সবচেয়ে বিপদজনক শত্রু মুসায়লামাকে শায়েস্তা করা। বেশ কিছু ধারাবাহিক সাফল্যের পর খালিদ বিন ওয়ালিদ শেষপর্যন্ত ইয়ামামার যুদ্ধে মুসায়লামাকে পরাজিত করেন।

হিজরি ১১ সালে এ যুদ্ধ শুরু ও সমাপ্ত হয়। ১২ হিজরিতে আরব মদিনায় অবস্থান করা খলিফার নেতৃত্ব একীভূত হয়। বিদ্রোহী নবীদের যুদ্ধে পরাজয়ের মাধ্যমে আবু বকর আরবকে ইসলামের অধীনে সুসংহত করেন এবং ইসলামী রাষ্ট্রকে পতনের হাত থেকে রক্ষা করেন।